নিউজ ডেস্ক : যুক্তরাজ্য প্রবাসী অনলাইন এক্টিভিস্ট, আব্দুল কাদির জিলানীর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় তার মা-বাবাসহ ২ ভাই গুরুতর আহত হয়েছেন। আহতরা হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
গতকাল সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারী) রাতে তার গ্রামের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
তিনি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার রায়সন্তোসপুর গ্রামের মাসুক মিয়ার ছেলে।
জানা যায়, জিলানী বাংলাদেশে থাকাকালীন বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন এবং ছাতক থানার সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি একাধারে বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে স্বরব থাকেন এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন ইস্যুতে বেশ লেখালেখি করেন। জিলানী বর্তমানে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন এবং বিভিন্ন মাধ্যমে রাজনৈতিক ইস্যুতে প্রায় সমালোচনা মূলক পোস্ট দিয়ে থাকেন।
জানা যায়, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার একটি পোস্টকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সাইবার সিকিউরিটির সমালোচনা করে একটি পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন।
এছাড়াও পোস্টে তিনি এলাকার বেশ কিছু বিএনপি নেতাকে ভারতের দালাল বলে আখ্যায়িত করে লিখেন যে, বিএনপির এই সকল নেতাদের কারণে দেশ আবারো ভারতের অংঙ্গ রাজ্যে পরিণত হবে। এরপর তার এই পোস্টটি এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে৷ যে কারণে স্থানীয় বিএনপির নেতা কর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে তিনি বাংলাদেশের পতিত সরকার (আওয়ামী লীগ) এবং বর্তমান অন্তবর্তী সরকারের সমালোচনা করে সোস্যাল মিডিয়ায় অনেকগুলো পোস্ট দিয়েছেন। এছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় স্থানীয় বিএনপি নেতা মোঃ মিজানুর রহমানের চৌধুরী ও তার গংদের বিরাগভাজন হয়ে আছেন।
স্থানীয়রা জানান, আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের ভয়ে ৫ আগস্টের আগেই জিলানী দেশ ত্যাগ করেন এবং সেই থেকে তিনি আর দেশে ফিরেননি। এখন তার সোস্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ করার কারণে পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের এজেন্ট ও বিএনপি নেতা মো. মিজানুর রহমান চৌধুরী ও তার ক্যাডারবাহিনীর ভয়ে তিনি দেশে ফিরতে পারছেন না।
তারা আরও বলেন, ২০২৩ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশের বাইরে বসবাস করছেন এবং পতিত সরকারের ভয়ে তিনি দেশে ফিরতে পারেননি। কারণ, তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। জিলানী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে কলাম লিখতেন, যুব সমাজকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে উসকানি দিতেন। ফলস্বরূপ, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জিলানীকে হত্যার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু জিলানী যুক্তরাজ্যে বসবাস করার কারণে তাকে হত্যা করা সম্ভব হয়নি।
গত কয়েকদিন আগে, এলাকায় জিলানীর ফেসবুকে একটি নতুন পোস্ট প্রকাশকে কেন্দ্র করে এক চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল কারণ পোস্টটিতে সাইবার সিকিউরিউটি অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে লেখার সাথে সাথে স্থানীয় বিএনপি নেতার অপকর্মের বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তারা বলেন, জিলানীর এই লেখার কারণে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী এই হামলা চালাতে পারেন বলে এলাকার অনেকেই ধারণা করছেন।
জিলানীর এক প্রতিবেশী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ২৯ তারিখ আনুমানিক মধ্যরাতে মুখোশধারী একদল দুর্বৃত্ত জিলানীর বাড়িতে আক্রমন করে এবং বাড়র প্রদান দরজা ভেঙ্গে বাড়িতে প্রবেশ করে ঘরের দামী আসবাব পত্র ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলে।
জিলানীর বাবা, মা ও দুইভাই বাড়িতে অবস্থান করায় তারা এই হামলার প্রতিবাদ করে। এতে দুর্বৃত্তরা ক্ষীপ্ত হয়ে জিলানীর মা-বাবা ও দুই ভাইয়ের উপর হামলা করে তাদেরকে মারাত্মভাবে আহত করে। এতে ভাই আক্তার হোসেনের অবস্থা গুরুতর ভাবে জখম হয়েছে। তারা সবাই নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানী এক জনপ্রতিনিধি বলেন, জিলানী দেশে থাকা অবস্থায় নিজ দলের নেতা মিজানুর রহমানের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা থাকায় ওই নেতা জিলানীর কোন ক্ষতি করতে না পারলেও, সরকার পতনের সাথে সাথে জিলানীর উপর প্রতিশোধ নিতে বিভিন্ন ভাবে তার বাবা-মাকে মানসিকভাবে অত্যাচার করে আসছিল। গত দুই দিন আগে একটা ফেসবুক পোস্ট নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি শুরু হয় এবং রাতের অন্ধকারে একদল দূর্বৃত্ত জিলানীর বাড়িতে আক্রমণ করে দামি আসবাবপত্র ভেঙ্গে এবং জিলানীর মা-বাবা ও দুই ভাইকে আহত করে পালিয়ে যায়। তখন জিলানীর বাবা ও মা ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে যে, এই আক্রমণ স্থানীয় বিএনপি নেতার লোকজনই করেছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কবির মিয়া জানান, জিলানী ছাত্রদলের ছাতকের নেতা ছিলেন এবং বাংলাদেশের থাকা অবস্থায় বিএনপি নেতা মিজান চৌধুরীর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলায় বিএনপির একাংশের বিরাগভাজন ছিলেন। তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখালেখি করেন।
জানা যায়, আওয়ামীলীগ সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে একটা ফৌজদারি মামলা ফাইল হয়েছিল এবং পুলিশ প্রায় তাদের বাড়িতে আসা যাওয়া করতো। পতিত সরকারের অত্যাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন এবং বিভিন্ন সময় লেখালেখি করতেন। এর আগে রাজনৈতিক ইস্যুতে স্থানীয় বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরীর সাথে তার একটা বিরোধ ছিল এবং তিনি আওয়ামীলীগ সরকার পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এলাকার ক্ষমতা নিজ হাতে তুলে নেন। ওই নেতার কুকীর্তির বিরুদ্ধে জিলানী একটা পোস্ট দেয়ায় ওই নেতার সমর্থকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরের দিনরাতে কে বা কারা জিলানীর বাড়িতে আক্রমন করে ভাংঙ্গচুর করে পালিয়ে যায় তা কেউ প্রকাশ্যে বলতে নারাজ। এলাকার কেউ কেউ ওই নেতাকে ইঙ্গিত করে বলেন যে, বিএনপির ওই নেতার হুমকিতে জিলানীর বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।
ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানান।
إرسال تعليق